Discuss Forum
1. সম্প্রতি (আগস্ট-২০২৪) গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ায় আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হয়েছে কোন দেশে?
- A. বাংলাদেশ
- B. বাংলাদেশ
- C. বাংলাদেশ
- D. বাংলাদেশ
Answer: Option A
Explanation:
সম্প্রতি (আগস্ট ২০২৪) গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ার ফলে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। গজলডোবা বাঁধ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়া হওয়ায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী এবং রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এই অঞ্চলে নদীগুলোর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে বন্যা পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করেছে।
গজলডোবা বাঁধ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলায় তিস্তা নদীর উপর অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ। এই বাঁধটি ভারত এবং বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। আগস্ট ২০২৪ সালে গজলডোবা বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয়েছিল, কারণ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। বাঁধ থেকে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে ভারতের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত না হয়।
কিন্তু এই পানি বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলো, বিশেষ করে তিস্তা নদীর অববাহিকায় থাকা অঞ্চলগুলো, বন্যার কবলে পড়ে। এর ফলে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী এবং রংপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এই আকস্মিক বন্যার ফলে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাস্তা, সেতু, এবং অন্যান্য অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো দ্রুত ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে, কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বন্যার কারণে নদীর পানির স্তর বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা জনজীবনে ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে যাওয়ার কারণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে, তবে রাস্তা এবং পরিবহন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ত্রাণ কার্যক্রমে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
গজলডোবা বাঁধটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত। এটি তিস্তা নদীর উপর নির্মিত একটি বাঁধ, যা মূলত জল নিয়ন্ত্রণ এবং সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়। গজলডোবা বাঁধ তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে, যা তিস্তা নদীর পানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কৃষি, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, এবং অন্যান্য সেচ কার্যক্রমে সহায়তা করে।
গজলডোবা বাঁধ নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিরোধের মূল কারণ তিস্তা নদীর পানি বণ্টন। তিস্তা নদী বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী, যা উত্তরবঙ্গের জীবনধারার ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে।
বিরোধের কারণ:
পানি বণ্টন চুক্তির অনুপস্থিতি: তিস্তা নদীর পানির সুষ্ঠু বণ্টনের জন্য ১৯৮৩ সালে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হয়েছিল, যার আওতায় বাংলাদেশ ৩৭.৫% এবং ভারত ৩৯.৫% পানি পাবে। তবে, এই চুক্তি কার্যকর হয়নি এবং পূর্ণাঙ্গ চুক্তি এখনও স্বাক্ষরিত হয়নি। ফলে, ভারত গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে পানি নিয়ন্ত্রণ করে, যা বাংলাদেশের জন্য পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ নিশ্চিত করে না।
কৃষিতে প্রভাব: তিস্তা নদীর পানি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুষ্ক মৌসুমে গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে পানির প্রবাহ কমিয়ে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের কৃষিজমিতে পানি সংকট দেখা দেয়। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়, যা খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলে।
বন্যা ও শুষ্কতার প্রভাব: বর্ষার মৌসুমে গজলডোবা বাঁধের গেট খুলে দিলে অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত হয়ে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি করে, যা ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে, শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে রাখায় নদীতে পানি কমে যায়, যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা: দুই দেশের মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে, কিন্তু রাজনৈতিক কারণসহ বিভিন্ন কারণে চুক্তি সম্পাদিত হচ্ছে না। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অবস্থানও এই চুক্তির পথে বাধা সৃষ্টি করেছে।
পরিণতি:
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বিরোধের ফলে বাংলাদেশে কৃষি, পরিবেশ, এবং জনজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা এবং সমঝোতা প্রয়োজন। তবে চুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়া পর্যন্ত এই বিরোধ চলতে থাকবে, এবং এর ফলে উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
Post your comments here: